অন্যান্য সাহিত্য

জীবনের যতিচিহ্নগুলো-৮


[পর্ব-৮: মাদ্রাসা পর্ব]
রাতে আর ঘুম আসে না। গুরুদায়িত্ব কাঁধে। দুই বন্ধু চেয়ারম্যান প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বী। পরদিন আসরের নামাজের পর ভোট। কেন্দ্র মরিয়মদের কাছারি ঘর। সেখানে কলাপাতা দিয়ে কাঠের ঢুলের ওপর ভাতের পাতিল রাখা। পাতিলের মুখ মরিয়মের পুরনো ওড়না দিয়ে বাঁধা। পাতিলের ভেতর ব্যালট ফেলার জন্য ব্লেড দিয়ে ওড়নার মাঝখানে দুই ইঞ্চি পরিমাণ কেটে দেওয়া হয়েছে।

কী একটা দায়িত্ব পেলাম, ঘুমাতেই পারি না। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। উঠে দরোজা খুলে উঠোনে নামি। দেখি সাদা জোসনায় সারা বাড়ি থইথই করছে। চাঁদের আলোও যে গাছের পাতায় দোল খায়, আগে দেখিনি। তারই সঙ্গে নানা রঙে উড়ে বেড়াচ্ছে অজস্র জোনাকি। একেকটা জোনাকি যেন একেকটা স্বর্গীয় দূত। আমি বেশ কিছু জোনাকি ধরে বুক পকেটে রাখি। তারা উড়ে যেতে যায়, চলে যেতে চায়। আপ্রাণ চেষ্টা করে কারাপ্রাচীর থেকে বের হওয়ার। পারে না। তখন আমার বুকের বামপাশে নুর জ্বলে। আমি আলোকিত হই।

তাতে ঝুলছে পূর্ণচাঁদ। আমার মাথাকে পূর্বদিকে ঠেলে দিয়ে পশ্চিম আকাশ থেকে দুধের নহর বইয়ে দিচ্ছে। আমি সেই ধবল দুধের নহরে ভেসে যাচ্ছি। নাহ! ভাসছি না। শুয়ে শুয়ে তারা গুনছি

হাফেজ মামা বলেছিলেন, কোরানে হাফেজরা মারা গেলে তাদের সিনা পচে না। সেখানে নুর জ্বলে। কথাটা অকারণেই মনে পড়ে গেলো। মনে পড়ে গেলো—আ রে আমি তো হাফেজ! আর একপারা খতম করতে পারলেই পূর্ণাঙ্গ হাফেজ। সাধারণ কোরআন পাঠকেরা প্রথম পারা থেকে পাঠ শুরু করে। শেষ করে ত্রিশ নম্বর পারায় গিয়ে। আর হাফেজদের নাকি শুরু করতেই হয় ত্রিশ নম্বর পারা দিয়ে, আর শেষ করতে হয় ঊনত্রিশ নম্বর পারা দিয়ে। আমার ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে। আটাশ পারা শেষ। কপালের ক্ষত শুকিয়ে গেলে আবার মাদ্রাসায় যাব। তখন বাকি ঊনত্রিশ নম্বর পারা শেষ করবো। সময় লাগবে হয়তো দুই সপ্তাহ। এরপরই পূর্ণ হাফেজ। তখন আমার সিনায় নুর জ্বলবে। মৃত্যুর পর আমার সিনা পচবে না। আমি আনন্দে উদ্বেল।

ধবধবে সাদা রাতে, চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি ঘাসের ওপর। এর আগে মেঝ খালার বিয়ের রাতে নানাবাড়ির উঠোনে সামিয়ানার নিচে চিৎ হয়ে শুয়েছিলাম। প্যান্ডেলের  বাইরে বিরাট বিরাট পেতলের পাতিল সাজানো। পাশে টুলের ওপর জ্বলছে কেরোসিনের হ্যাজাক লাইট। সেই লাইটের আলো প্যান্ডেলের ভেতরেও দস্যুর মতো ঢুকে পড়েছে। সে দিকে তাকালে কেমন যেন চোখের সামনে অপার্থিব লালচে আলোর বৃত্ত রচনা হতে থাকে। সেদিকে আর তাকাই না। তাকাই আকাশের দিকে। আকাশ দেখি না। দেখি লাল-নীল-হলুদ—বিচিত্র রঙের বড় বড় কাপড়ের তালি দেওয়া বিশাল সামিয়ানা। আপাতত এটাই আমার আকাশ—নীল সিয়া আসমান। কিন্তু এই সামিয়ানায় নিরঙ্কুশ নীল তো নেই। আকাশ তো নিরঙ্কুশ নীল। ধুর! কী সব ভাবছি। সামিয়ানা তো সামিয়ানাই—মানুষের তৈরি। তাই বিচিত্র রঙের। আর নীলসিয়া আসমান তো আল্লাহর হুকুমে তৈরি। দুটির স্রষ্টা ভিন্ন; ধর্ম ভিন্ন; চরিত্র ভিন্ন; ব্যবহারও।

কিন্তু আজকের আকাশ সত্যি সত্যি আকাশ। তাতে ঝুলছে পূর্ণচাঁদ। আমার মাথাকে পূর্বদিকে ঠেলে দিয়ে পশ্চিম আকাশ থেকে দুধের নহর বইয়ে দিচ্ছে। আমি সেই ধবল দুধের নহরে ভেসে যাচ্ছি। নাহ! ভাসছি না। শুয়ে শুয়ে তারা গুনছি। মাঝেমাঝে ছোট নারিকেল গাছটার একটা পাতা আমার চোখ বরাবর এসে দোল খেয়ে যায়। তাতে হালকা ছায়া পড়ে মুখে। কিন্তু ভিন্ন একটি চিত্রও চোখে পড়ে। কেমন যেন পাতা সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাঁদটা ‍দুলে ওঠে। যেন একটু খানি উত্তর-দক্ষিণ দিকে দোলে। বিষয়টা বেশ মজার তো। এবার আমি উঠে দাঁড়াই। দূরে ধানক্ষেতে নাড়ার স্তূপের ওপর যেন একঝাঁক জোনাকি হল্লা করছে। এবার দেই দৌড় সে দিকে। দৌড়াই আর চাঁদের দিকে তাকাই। আরে! কী ব্যাপার! চাঁদও দেখি আমার সঙ্গে সঙ্গে চলে। কী মুশকিল! চাঁদকে তো উঠোন সোজা রেখে এলাম। আমি এত দূরে দৌড়ে এলাম, চাঁদও সঙ্গে সঙ্গে চলে এলো। খুব ভয় পেয়ে গেলাম। কী হচ্ছে আমার সঙ্গে? ভয়ে আর জোনাকি ধরতে গেলাম না। কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরলাম।

নদীতে মাঝির নৌকায় বিকট শব্দে শিঙায় কে যেন ফুঁ দিলো। মনে হলো ইস্রাফিলের শিঙার ফুঁ। বুক ঢিপঢিপ করছে।

বিস্ময়-ভয়-উৎকণ্ঠায় রাত পার হচ্ছিল। গভীর রাতে বাবা এলেন বাজার থেকে। যথারীতি নিয়ে এলেন বিস্কুটের প্যাকেট। একটি প্যাকেট আমার মাথার কাছে, পাঁচটি ইসমাইলের পাশে রাখলেন। আমি ঘুমের ভান ধরে থাকলাম। নিশ্বাসও ফেলছি না। মনে হচ্ছে নিশ্বাস ফেললেই ধরা পড়ে যাব—জেগে আছি।

বাবা খেতে বসেছেন। খাবারের রুম আমাদের রুম থেকে দেখা যায়। মাঝখানে কোনো বেড়া নেই। তাই একচোখের পাতা হালকা খুলে উঁকি মারলাম। দেখি বাবার সঙ্গে হাসান ভাইও। হাসান ভাই হলো, মরিয়মের সেজ ভাই। তারা তিন ভাই, একবোন। মরিয়ম সবার ছোট। তার বড় হাসান ভাই।

তো হাসান ভাইও আজ আমাদের ঘরে খেতে বসেছে। খাওয়া শেষে বাবা তাকে এগিয়ে দিলেন বাড়ির দরোজা পর্যন্ত। যেতে যেতে  বাবা বললেন, তিনি সকালে চট্টগ্রাম যাবেন চালান আনতে। হাসান ভাই যেন আমাদের দোকানে বসে। হাসান ভাইও বাবাকে আশ্বস্ত করলো—‘ঠিক আছে কাকা, আম্নে কোনো টেনশান করিয়েন না।’ এবার আমার কেমন যেন ভালো লাগা শুরু হলো। যাক বাবা বাড়ি থাকবেন না কদিন। খুব আনন্দ করা যাবে। দৌড়াদৌড়ি। লুকোচুরি। গোল্লাছুট। সবই।  ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।

হঠাৎ দেখি সাদা চাঁদখানা কালো মেঘে ঢেকে গেছে। তুমুল বাতাস বইছে। খড়কুটো সব উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মেঘ ডাকছে। ভয়ঙ্কর সেই ডাক। নদীতে মাঝির নৌকায় বিকট শব্দে শিঙায় কে যেন ফুঁ দিলো। মনে হলো ইস্রাফিলের শিঙার ফুঁ। বুক ঢিপঢিপ করছে। দোয়া-দরুদ পড়া শুরু করেছি। হঠাৎ ঝড় থেমে গেলো। শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। বৃষ্টি আমার চোখে ঢুকে যাচ্ছে, মুখে ঢুকে যাচ্ছে। নাকেও। দুই হাত দিয়ে প্রাণপণে ঠেকানোর চেষ্টা করছি। পারছি না। এবার হঠাৎ যেন কোমল  শব্দ কানে এলো—‘কী হয়ে আব্বা? এই রকম করছিস ক্যা? স্বপ্ন দেইখছসনি? ডরাইছসনি?’ কণ্ঠ যেন চেনা চেনা লাগলো। আরে কণ্ঠ তো বাবার। এবার চোখ খুলে দেখি বাবা আমার চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন।

তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তোর তো ক্ষুধার জ্বালা বেশি। ক্ষুধা লাগলে কাউকে চিনিস না।  কুত্তা মেজাজ।

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উঠে বসলাম। বললাম, ভোর হয়ে গেছে? বাবা বললেন, ‘অ্যাঁ। হুন আব্বা। আঁই চিটাগাং যাইয়ের। দুই ভাই মিলিমিশি থাইকবি। হাসাইন্যা দোকানে বইবো। হাঁটবাজার করি দি যাইবো। তোরা কিন্তুক বাড়িততুন বাইর-টাইর হইছ না। তোর আম্মা কিন্তুক একলা। মনে থাইকবোনি?’ আমরা দুই ভাই হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ালাম। বাবা আমাদের দুভাইকে কপালে-গালে চুমো খেয়ে বের হয়ে গেলেন।

বাবা বের হয়ে যাওয়ার পর দুই ভাই মরিয়মদের বাড়িতে হাজির। ভোটকেন্দ্র দেখি। ভোটের রান্নাবান্না কী হবে তার জোগাড়যন্তর দেখি। দুপুরে  আমরা কেউ আজ আর নিজ নিজ বাড়িতে খাবো না। ভোটের খাবার খাবো। গ্রামে যে কয়টি বাড়ি ছিল, সব বাড়ি থেকে মুঠি চাল তোলা হয়েছে। প্রায় কেজি পাঁচেক। এর বাইরে কেউ দিয়েছে সরিষার তেল, কেউ দিয়েছে আলু, মরিচ-হলুদ-মসলা-লবণ, কেউ দিয়েছে মুরগি, কেউবা পুকুরের তেলাপিয়া।  নানি গোছের একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রান্নার। তিনি রান্না করছেন মরিয়মদের রসুই ঘরে। মরিয়ম বা আমি ছাড়া কেউ তার ত্রিসীমানায় ঘেঁষা নিষেধ।

রান্না শেষ হতে হতে সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। ক্ষুধার যন্ত্রণায় সবাই ছটফট করছে। আমি ছটফট করতাম হয়তো। কিন্তু মরিয়মের কল্যাণে আমাকে আপাতত দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। সে কিছুক্ষণ পরপর লুকিয়ে নিয়ে আসে সেদ্ধ ডিম, আস্ত তেলাপিয়া মাছ ভাজা। খড়ের গাদার আড়ালে ডেকে নিয়ে আমাকে বলে, ‘জামাই নে, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। তোর তো ক্ষুধার জ্বালা বেশি। ক্ষুধা লাগলে কাউকে চিনিস না।  কুত্তা মেজাজ।’ মরিয়ম ধবধবে সাদা ফ্রক পরেছে। তাকে সত্যি পুতুলের মতো লাগছে। আমি আজ আর তার কথায় রাগ করি না। যা এনে দেয়, তাই খেয়ে নেই। একবার আমার ভাইয়ের জন্যও চেয়ে নিলাম। বললাম, ‘ইসমাইলরেও দিস।’ মরিয়ম বলে, ‘তোরে কইতে অইবো না। আমার দেবর। আমার খেয়াল আছে।’

রান্নাবান্না শেষ হলে উঠোনে দুই সারি পাটি বিছিয়ে খাবারের আয়োজন করা হলো। সূর্য যেহেতু পশ্চিমে হেলে পড়েছে, সেহেতু ঘরের ছায়া পড়েছে উঠোনে। তাই রোদ নেই। সবাই খেতে বসেছি। কোত্থেকে এসে হাজির হাসান ভাই—‘কিরে তোরা আমারে খাওয়াবি না?’ মরিয়ম বলে, ‘দাওয়াত দিয়ে খাওয়াই না। খাইতে চাইলে বসে যা।’ হাসান ভাই আমার পাশেই বসলেন। আমরা সবাই মাটির বাসনে খেতে বসেছি। অ্যালুমিনিয়ামের থালা কেউ কেউ ব্যবহার করলেও ওই অনুষ্ঠানের রসুম ছিল বাসনে বা চিনা বত্তনে (সিরামিকসের ডাউস আকৃতির প্লেট)  খাওয়া। বাসনে খাওয়াকে খাওয়ার আদব বলে গণ্য করতেন আমার নানার বয়সীরা। সেখানে সম্মানও দেখতেন। তাদের মতে, মাটির বাসনে বরকত ও তৃপ্তি—দুটাই আছে।

‘চল। আমার আর রানি হওয়ার কাম নাই। তোরও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার কাম নাই। আগে পালাই।’

সে যাই হোক।  কিছুক্ষণ পরপর  হাসান ভাই আমার বাসন থেকে টুক করে একটুকরো মাছ নিয়ে নিজের বাসনে ভাতের নিচে লুকিয়ে ফেলতেন। আর চিৎকার করে বলতেন, ‘তো-তো-তোতলার বাসনে একটা মাছ দে তো।’ মরিয়ম এনে আরেকটুকরো মাছ দিয়ে যেতো। অমনি হাসান ভাই ভাতের নিচ থেকে লুকানোর মাছের টুকরোটা বের করে খাওয়া শুরু করতেন।

খাওয়ার পর্ব শেষ। হাসান ভাই আমাদের দোকানে বসবেন। তাই চলে গেলেন। ভোটগ্রহণ শুরু। বুথে দুই প্রার্থীর পক্ষে দুজন এজেন্ট। জাফরের পক্ষে লালি, ইউসুফের পক্ষে কালি। মরিয়ম, ইসমাইল ও আমি উঠোনে মোড়া পেতে বসে আছি। ভোটগ্রহণ শেষ হলে গণনা করবো। যে জিতবে, তাকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করবো।  আমাদের সেই আশায় গুড়েবালি। লালি-কালি দুই বোন লেগে গেলো তুমুল ঝগড়া। লালির অভিযোগ, ‘কেউ একজন দুইবার ভোট দিয়েছে’। কালির প্রতিবাদ, ‘হতেই পারে না।’

বুথের ভেতরের ঝগড়ার কথা রাষ্ট্র হতে সময় লাগলো না। মুহূর্তে ছড়িয় পড়লো বাইরে অপেক্ষমাণ  ১৬/১৭ জন  প্রার্থী-কর্মী-সমর্থক-ভোটারের মধ্যে।  সত্য-মিথ্যা কে আর যাচাই করে? শুরু হলো হাতাহাতি। ধাক্কাধাক্কি। একপক্ষ বাড়ির দরজার (উঁচু আল)  উত্তর পাশে।  আরেক পক্ষ দক্ষিণ পাশে।  উত্তর পাশে যারা, তাদের হাতে লাঠিসোঠা তেমন কিছু নেই। বলা যায় নিরস্ত্র। দক্ষিণ পাশে যারা, তাদের হাতে লম্বা লম্বা লাঠি। সেই লাঠির মাথায় সুতা দিয়ে বাঁধা বেতের লম্বা কাঁটা। ওই কাঁটা জামা-কাপড়ের লাগলেই ছিঁড়ে যায়। শরীরে লাগলে তো রক্তাক্ত দশা। দক্ষিণ পাশ থেকে জাফর তার হাতে থাকা বেতের কাঁটাযুক্ত লাঠি  ইউসুফের পিঠের ওপরে সজোরে চেয়ে ধরেই দিলো হেঁচকা টান। ইউসুফ ‘মাগ-গো’ বলে এক মর্মভেদী চিৎকারে লুটিয়ে পড়লো জমিতে। অমনি উত্তর দিক থেকে ইউসুপের সমর্থকরা মরিচের গুঁড়ো ছুড়ে মারলো জাফর বাহিনীর দিকে। মরিচের গুঁড়ো সবার চোখে-মুখে-নাকে ঢুকে গেলো। শুরু হলো কান্নাকাটি। ছোটাছুটি। যে যেদিকে পারছে দৌড়ে পালাচ্ছে। এই সংঘর্ষের খবর শুনে গ্রামের বড়রাও  চিৎকার করতে করতে এগিয়ে আসতে লাগলেন। কাছারি ঘরের আড়াল থেকে সেই দৃশ্য দেখে আমার হাঁটুর কাঁপন শুরু। মরিয়মের দিকে তাকালাম। দেখলাম, সেই মুখেও ঘন কালো মেঘের ছায়া। বললাম, ‘কীককক-কী করমু?

 মরিয়ম খপ করে আমার হাত ধরে বললো, ‘চল। আমার আর রানি হওয়ার কাম নাই। তোরও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার কাম নাই। আগে পালাই।’ ইসমাইলকে বললো, ‘তুইও দৌড় দে।’ আমরা তিন শিশু রুদ্ধশাসে দিলাম দৌড়। সোজা নানার বাড়ির দিকে। যেন সেখানে আমাদের কেউ নাগাল পাবে না। যেন যেখানে সকল অনাথের নাথ, সকল শরণার্থীর আশ্রয়দাত্রী, সকল ফরিয়াদি-অপরাধীর লালনকারী আছেন। তিনি আমার দাদি (নানি)। আমরা ছুটছি। আমাদের আদৌ কেউ তাড়া করছে কি না, তা দেখারও সাহস হলো না ওই মুহূর্তে!

জীবনের যতিচিহ্নগুলো-৭

চলবে…

মন্তব্য